ক্যামিকেল সংকটে এস আলমের তেল পরিশোধন মিল, প্রভাব পড়ছে বাজারে

  • ভোজ্যতেল আমদানিতে সবচেয়ে এগিয়ে এস আলম গ্রুপ, আমদানি সংকটে নিষ্ক্রিয় দুটি বৃহৎ পরিশোধন মিল।
  • কেমিক্যাল আমদানি করতে পারছেনা এস আলম: মজুদ থাকা তেল পরিশোধন বন্ধ, প্রভাব পড়ছে বাজারে।
  • খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সতর্কবার্তা: এস আলমের আমদানি পুনরায় শুরু জরুরি।

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের সিংহভাগই আমদানি নির্ভর। প্রধান প্রধান কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজার থেকে আমদানির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল আমদানি, পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গত ৫ বছরে ২২ লাখ টন পাম অয়েল ও সয়াবিন আমদানি করেছে। যা এক বছরে দেশের মোট ভোজ্যতেলের চাহিদারও বেশি।

দেশে বার্ষিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২-২৪ লাখ টন। যার মধ্যে ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয় বিশ্ববাজার থেকে। তিল, তিসি, বাদাম, সরিষা, সূর্যমুখী, ব্রাইনব্রেন অয়েল এর মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন হয়। বাকি পাম অয়েল ও সয়াবিন আমদানি হয় মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে। ৫ আগষ্ট পরবর্তী এস আলম গ্রুপের উপর আমদানি বিধিনিষেধের কারণে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যত শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের তেলের বাজারে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এস আলম গ্রুপ ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সর্বমোট পাম অয়েল আমদানি করেছে ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৩১৪ টন। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আমদানি করেছে আরও ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৯৩ দশমিক ৩৯৯ টন পাম অয়েল। অপর দিকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে এস আলম গ্রুপের সয়াবিন আমদানির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৬ দশমিক ৪৯১ টন। চলতি বছরের (২০২৪ সাল) জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি আমদানি করেছে ২৮ হাজার ৯০০ টন সয়াবিন। জুন পরবর্তী সময়ে গ্রæপটি বছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় দ্বিগুণ সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমদানিতে সংকটের কারণে এস আলম গ্রুপ বর্তমানে আমদানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি মজুদ অপরিশোধিত পাম অয়েল ও সয়াবিন কেমিক্যালের অভাবে পরিশোধন করতে পারছে না। যদিও দেশের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে পাম অয়েল ও সয়াবিনের দাম। দেশে আমদানি হওয়া ভোজ্যতেলের সরবরাহ দিতে না পারায় ধারাবাহিক দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশের ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টরা।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ৫ আগষ্টের আগে দেশে পাম অয়েলের মণপ্রতি দাম ছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক মাসের মধ্যেই পাম অয়েলের দাম বেড়ে রেকর্ড ৬ হাজার ৫০০ টাকায় উঠে যায়। আবার সয়াবিনের মণপ্রতি দাম ছিল ৬ হাজার টাকা। কিন্তু এক পর্যায়ে সয়াবিনের দাম বেড়ে ৭ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি ও দেশের মিলগুলোর সরবরাহ সংকটে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলেও এস আলম গ্রুপের আমদানি করা কয়েক লাখ টন সয়াবিন ও পাম অয়েল শুধুমাত্র কেমিক্যালের অভাবে পরিশোধন ও বাজারজাত করছে পারছে না। এই সংকট নিরসনে এগিয়ে না আসলে দেশে ভোজ্যতেলের বাজার ফের অস্থিতিশীল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোজ্যতেলের বুকিং দাম রেকর্ড বৃদ্ধির পর বর্তমানে কমেছে। এক পর্যায়ে পাম অয়েলের বুকিং ৫ হাজার ৫০০ রিঙ্গিতে উঠলেও বর্তমানে কমে ৪ হাজার ৩০০ রিঙ্গিতে নেমে এসেছে। যদিও সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি শুল্ক নামিয়ে এনেছে শূণ্যের কোটায়। এমতাবস্থায় দেশে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ার কথা থাকলেও না কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা বাড়তি দামে ভোজ্যতেল কিনছেন বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের অস্থিতিশীলতা কাটাতে এস আলম গ্রুপের আমদানি ও উৎপাদন পুনরায় চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এস আলম গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত হলে ভোজ্যতেলের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *